মা ও স্বাধীনতা
মাকে বলেছিলাম, স্বাধীন করেই তবে ঘরে ফিরবো
সেদিন মায়ের আচল গিয়েছিলো ভিজে
আমার রক্তচক্ষুর আড়ালেও টের পেয়েছিলাম,
পাছে দুর্বল হই ভেবে কিছুই হয় নি ছিলো সে মুখ
হাসিমাখা মুখখানা দেখিয়ে বলে-এবার যা তুই
পতাকা নিয়েই ফিরবি বলে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলো কাঁধে
দেশ স্বাধীন করার দৃঢ় মনোবল আর পতাকা মাথায় নিয়ে
সেদিনের সেই ঘর ছাড়ার দৃশ্য আজ স্মৃতির পাতায় ঘোরে।
ক্যাম্পের গোলাগুলি আর বারুদের গন্ধে নির্ঘুম কেটেছিলো বহু রাত
মৃত্যুকে সাথে নিয়েই দুর্গম পথে হেঁটেছিলাম হাজার হাজার মাইল
সাথে ছিলো আরও মায়ের হাসিমাখা মুখ আর তসবিহ-দোআ-কালাম
নিশীথ অন্ধকারে ছুটেছিলাম ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর জোনাকীদের সাথে
শুধু একটি আশায়-হানাদার বাহিনীর নিশ্চিহ্ন হবার অপেক্ষায়
মানুষ যেনো একটু নিজের মতো করেই বাঁচে তারই আঙিনায় !
ক্যাম্পেই পেয়েছিলাম মায়ের হাত কাঁপা চিঠি
লিখেছিলেন- কোনো শত্রুকে যেনো ওদের ঘরে না ফেরাই
বুলেটের আঘাতে যেনো ঝাঁঝরা করে দেই ওদের বুক
বুটের তলায় যেনো পিষে মারি ধর্ষনকারী-হানাদার-লম্পট
রাইফেলের বাট দিয়ে সজোরে দেই যেনো আঘাত
তবুও যেনো বাংলার নদী-খাল-বিল-জমিন মুক্ত পাই
স্বাধীন দেশের মুক্ত আকাশে যেনো আমার নি:শ্বাস উড়ে বেড়ায়।
মা, স্বাধীন করেই তো ফিরলাম ঘরে
আমার শোকে কেনো তবে চলে গেলে?
বিজয়ী পতাকা তোমার হাতে দিতে চেয়েছিলাম
স্বাধীন হাসিতে তোমার মুখখানার জ্বলজ্বল ছবিটা
আমার লাল-সবুজের তুলিতে আঁকতে চেয়েছিলাম
মাগো, তুমি শান্তিতে নি:শ্বাস নিবে বলেছিলে,
এখন অনেক মা অক্সিজেন ছাড়ে তোমার কাঙ্খিত মুক্ত আকাশে
অনেক শিশু খেলা করে তোমার মুক্ত আঙিনায়
শান্তিতে ঘুমাও মাগো; তোমার স্বাধীন জমিনে।