প্রিয় ননিতা
প্রিয় ননিতা,
এই চিঠি পাবে কিনা জানি না। পাওয়ার কথাও না। তবুও কেনো জানি লিখতে ইচ্ছা করছে। প্রেম হওয়ার পর প্রথম যেদিন তোমার সাথে বকুলতলায় দেখা হয়েছিলো; সেদিন আবদার করেছিলে আর বলেছিলে— "মালা গেঁথে তোমার খোপায় যেনো পরিয়ে দিই।" সেই বকুলতলায়ই আবদার পূরণ করেছিলাম। তার কিছুদিন পর আবদার করলে, মেলা থেকে তোমার জন্য যেনো লাল বেনারশী শাড়ী এনে দিই। সেই আবদার সাথে সাথেই পূরণ করতে পারি নি। টিউশনির টাকাটা তখনও পাই নি আমি। আবদার পূরণে আমার ব্যর্থতা ছিলো চোখে পড়ার মতোই। আমার ভেতরের ছটফটানি বুঝে সেই আবদার ফিরিয়ে নিয়ে নতুন আবদার করেছিলে– চুল বাঁধার লাল ফিতা এনে দিতে। কিন্তু তখনও আমার মন পড়ে ছিলো লাল বেনারশী শাড়িতেই। শেষ পর্যন্ত আমার কাছের এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে জামদানি শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম। এটা পেয়ে যেখানে খুশি হওয়ার কথা ছিলো; সেখানে তুমি অঝোরে কেঁদেছিলে। তুমি শুধু মিছে অপরাধবোধে ভুগছিলে। তোমার মনে আছে প্রিয় আমার? বিদ্যুৎ চমকালে প্রচন্ড ভয় পেতে। মেঘ হলেই ঘরে ফিরে যেতে চাইতে। একদিন ফুলার রোডে রিকশাযোগে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মেঘের গর্জনে সবার সামনে জড়িয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছিলে। অন্যরা ভেবেছিলো যে; তোমার প্রিয়জন কেউ হয়তো পরলোকগমন করেছেন ! আমাকে কোনোভাবেই ছাড়ছিলে না।
তুমি খুব ভালো রাঁধতে পারতে। একবার ক্যাম্পাসে আমার জন্য নুডুলস রান্না করে নিয়ে এসেছিলে। তখন পর্যন্ত জানতে না যে; আমার নুডুলস পছন্দ না। এই একটিই খাবার যা আমার অসহ্য লাগে আর গোটা দুনিয়ার মানুষের কাছে অতীব প্রিয় একটি খাবার। সেদিন ঘেমে গিয়েছিলাম ঐ এক বাটি নুডুলস শেষ করতে ! আমার ভাল লাগে না এটা জানালে তুমি কষ্ট পাবে বলে আর সেদিন বলি নি। নাক বন্ধ করে খেয়েছিলাম। সেদিনের পর আজ অব্দি নুডুলস আর খাই নি।
তুমি আমার গানের ভক্ত ছিলে। শুধু গান শোনাতে বলতে। আর আমি তোমার জন্য বিরতীহীন ক্যাসেট ছিলাম। তুমি শুধু প্লে করে দিতে। একটার পর একটা চলতে থাকতো তোমার সব প্রিয় গানগুলো। রবীন্দ্র, শ্রীকান্ত, নজরুল সবই চলতো ধাপে ধাপে। বিরহের গানগুলো তোমার অপছন্দের ছিলো। প্রেম-ভালবাসার গানগুলোই তুমি বেশি শুনতে। মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দিয়েও গান শুনতে। কি পাগলী ছিলে তুমি ! এখনও মাঝে মাঝে তোমার পাগলামীগুলো ভেসে উঠলেই মনের অজান্তে হেসে ফেলি।
ননিতা, সেদিন বেনারশী শাড়ি কিনেছিলাম ধার করা পয়সায় যদিও সেই ধার পরে শোধ করে দিয়েছিলাম। আর এখন জেনেভা শহরে ৫ কাঠার উপর বাড়ি করেছি। নিজের ২ টা ব্র্যান্ডের গাড়ি আছে। নিজের ৫ টা কোম্পানী আছে। একটা মিউজিক স্টেশনও দিয়েছি তোমার নামে। মাঝে মাঝেই অবকাশযাপনে যাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমুদ্র তীরে। কিন্তু কোথায় যেনো একটা শূণ্যতা অনুভব করি। মনে হয়, পদ্মার পাড়ে বালি নিয়ে যে খেলা করেছি তোমার সাথে; সেটা বালি দ্বীপের বালিতে পাই নি। সময়ে অসময়ে অনেক নারীদেরকে উপঢৌকন পাঠিয়েছি কিন্তু ১৮৯০ টাকায় কেনা সেই বেনারশী শাড়ীটিই আমার হৃদয়ে স্পর্শ করে আছে আজ অব্দি। এখন আর গান গাই না। তবে গান শুনি। বিদ্যুৎ চমকালেই তোমার সেই স্পর্শ আমার মনে পড়ে। বলে রাখি, আজও বিয়ে করি নি। আসলে তোমাকে না পাওয়ার বেদনায় নয়। কাউকে একান্তে পেতে ইচ্ছা হয় না বলেই আর কাউকে নিজের জীবনের সাথে সঙ্গী করি নি। তোমার আচমকা মৃত্যু আমার জীবনের অনেক সমীকরণই মেলাতে পারে নি। অনেক কথাই বলার ছিলো; সেগুলোও মনের মধ্যে ভেসে বেড়ায়। তুমি কি আমার ডাক শুনতে পাও ননিতা?
ভালো থেকো। খুব ভালো।
ইতি
তোমারই অমিও
২৫/৮/২০১৭ ইং