প্রতিটি পরিবারেই একটি দুর্নীতির গল্প আছে

এখানে দুর্নীতি বলতে আলাদা সুবিধা নেবার কিংবা ভিন্ন নীতি অনুসরণ করে সুবিধা আদায় করার কথা বলতে বুঝিয়েছি। একটু খুলে বলি তাহলে।
শিরোনাম পড়েই হয়তো চমকে যেতে পারেন। কিন্তু এই গল্প তো আপনার আমার প্রায় সকল পরিবারেই আছে। একটু ভেবে দেখুন তো ! মেলে কি না !
এই যে শাহেদ-সাবরিনার কথা সবাই বলছেন। তারা কি একা দুর্নীতি করেছে? তারা বিভিন্ন মানুষ এর সংস্পর্শে এই দুর্নীতিগুলো সম্পাদনা করেছে।
আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যখন গুরুতর অসুস্থ হন, তখন উপরের লেভেলের মানুষের সাথে যোগাযোগ করে অগ্রীম কেবিন বুক করার চেষ্টা করেন, ভালো ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবার জন্য বিভিন্ন মহলে তদবির করেন। নিম্নশ্রেণীর কোনো কর্মচারীকে ম্যানেজ করার জন্য ঘুষ প্রদান করেন। এরকম অনেক কিছুই হয়তো করেন। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি? আপনার এই পরিবারের সদস্যকে একটু বেশি সুবিধা দিতে গিয়ে অন্য কারো প্রাপ্য অধিকার থেকে অবচেতন মনে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে ফেলেছেন নিজেকে ! যে ডাক্তারের অন্য কোনো মুমূর্ষ রোগীকে চিকিৎসা দেবার কথা ছিলো, তিনি হয়তো বেশি সুবিধা নিয়ে আপনার পরিবারের সদস্যকে সাপোর্ট দিবেন। হয়তো কোনো আমলা কিংবা মন্ত্রীর রেফারেন্স এ আপনার পারিবারিক সদস্যকে চিকিৎসা দিতে বাধ্য হবেন। আপনি বিশেষ ঘুষের মাধ্যমে যে কেবিন বুক করবেন, তাতে হয়তো একজন গরীবের হক নষ্ট করছেন আনমনে। সেই হিসাবে যাবার জন্য বিন্দু পরিমান সময়ও আপনার কাছে নেই। যার বিশেষ কেউ নেই, তার হক খুব সহজেই মেরে দেওয়া যায় এসব ক্ষেত্রে। এই বিশেষ কেউ না থাকার কারণে সরকারী মেডিকেলে কেবিন পাওয়া সোনার হরিনের মতো। এসব গল্প সবাই জানে। কিন্তু নিজের বেলায় কেউই বুঝতে চায় না।
এবার আসি নিয়োগ বাণিজ্য কিংবা নিয়োগ দুর্নীতির সাথে আপনার-আমার পরিবারের সংশ্লিষ্টতার আলাপে। প্রতিটি পরিবারে কম বেশি একজন শিক্ষিত মানুষ আছেন। যারা চাকরি প্রত্যাশি। সেই চাকরি প্রত্যাশি সদস্যকে চাকরি নিশ্চিতকরণে অজান্তে কিংবা জেনে-শুনে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। আপনি হয়তো কোনো একসময় স্থানীয় এমপি/মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। মাঝে মাঝে হয়তো উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা অন্য কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেন। ক্ষেত্রবিশেষে এলাকার বিভিন্ন দালালদের সাথে আর্থিক লেনদেন করতে সচেষ্ট হন। অথচ দুর্নীতির জন্য বিভিন্ন সময়ে আপনারাই স্ট্যাটাস দেন, বড় বড় করে আর্টিকেল লেখেন। কিন্তু নিজেদের বেলায় এগুলোকে নীতি বহির্ভূত কাজ মনে করেন না। সুযোগ পেলে আপনিও টাকা-পয়সা দিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে ফেলেন। অনেকেই ভাবেন যে বেসরকারি জবে রেফারেন্স ছাড়া চাকরি হয় না। কথাটা আংশিক সত্য। তবে একটা বেসরকারি ফার্ম এর মালিক কখনই রেফারেন্স এ জব দিতে চান না। তবে অধীনস্ত কর্মচারী সেটা চাইতে পারেন। ক্ষেত্রবিশেষে এই অধীনস্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে বেসরকারি সেক্টরে চাকরি দেন। কিন্তু এই দুর্নীতির সাথে কি তিনি একাই জড়িত? সেই চাকরিপ্রত্যাশি পরিবার জড়িত নয়? টাকা দিয়ে এস.এস.সি পাশ করা মেয়ে প্রাইমারি চাকরিতে শিক্ষক হয়ে যাচ্ছে অথচ মাস্টার্স ১ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থী প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পাচ্ছে না। এরকম নজির আমার ঘরে বাইরে দেখছি। আজকে যাদেরকে দুর্নীতিবাজ বলে গালি দিচ্ছি, তাদের পরিবারের কেউ না কেউ এই দুর্নীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করছে অভিভাবকরা। তারা মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিজের সন্তানের জন্য প্রশ্ন কিনে ডাক্তার বানাচ্ছে। যখন সুশীলরাই সমাজের ভক্ষক হয়ে যায়, সেখানে দেশের উন্নতি কিভাবে রাতারাতি আপনি পাল্টাতে পারেন? সন্তানকে নকল করতে সহযোগিতা করেন অনেক অভিভাবকবৃন্দ। তারা সন্তানের ভালো ফলাফল চান। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের জন্য সচেষ্ট হন না। এজন্য দিনশেষে আমরা একটা ভাল বাংলাদেশ দেখতে পাই না। পারিবারিক দুর্নীতি জিরো করুন, দেশ বদলাবে।