আমার দাম্পত্য দ্বৈরাজ্যের নিয়মাবলী বনাম শেষের কবিতা
যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, জীবনের মানে কি; তখন থেকেই মনের মধ্যে বপন করতে শুরু করেছি আমার জীবনটা কেমন হওয়া চাই। এইচএসসি এর আগে সেইভাবে কোনো উপন্যাস পড়িনি।
কিন্তু ২০০১ এ যখন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ভর্তি হলাম, তখন ছিল পত্রমিতালীর যুগ। অসংখ্য চিঠি লিখেছি ২০০১-২০০৩ এ। অসংখ্য চিঠি পেয়েছি সেসময়ে। এমনও হয়েছে প্রতিদিন ৭-৮ টা
চিঠি ডাকযোগে পেয়েছি। আবার ৭-৮ টা চিঠি একই দিনে লিখে সাইকেলে করে চিঠি পোস্ট করতে গেছি যশোর জেলা পোস্ট অফিসে। কি যে ভাল লাগা কাজ করতো ! ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
সেসময় আমার বাল্যবন্ধু অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রিন্সকে খুব অনুসরণ করতাম। ওর সাথে পাল্লা দিয়ে চিঠি লিখতাম। (ঠিক ঐ অর্থে নয়) প্রিন্সের মাধ্যমে রবী ঠাকুরের শেষের কবিতার সাথে একটু আধটু
সখ্যতা হতে শুরু করে। আর আমার মনের মধ্যে ভালবাসার বীজ বপন হতে শুরু করে। শেষের কবিতার অডিও শুনতে শুরু করলাম ২০০১ থেকেই। আজ অব্দি শুনে চলেছি। কখনো পুরাতন হয় না
আমার কাছে। এখন জীবনের পথ চলায় কিছু বাস্তবিক প্রয়োগ করতে শুরু করেছি। তারই ধারাবাহিকতায়, আমার দাম্পত্য জীবনের অংশ হিসাবে অমিত-লাবণ্যের দাম্পত্য দ্বৈরাজ্যের নিয়মাবলীর মতো
আমিও স্বপ্ন দেখি। তবে লাবণ্যের দেখা পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। কেটি মিত্রর দেখাটা সহজেই মেলে। মোটরে মোটরে ধাক্কা অনেকের সাথেই লাগে, কিন্তু তারা লাবণ্য হয় না। আবার আংটি বদল
হলেও তারা কেটি মিত্র হতে পারে না। (শেষের কবিতা না পড়লে এটা বোঝা দু:সাধ্য)
এবার ভূমিকা না করে আমার দাম্পত্য দ্বৈরাজ্যের নিয়মাবলি দাখিল করি। আমার বউ হবে সেকেলে আধুনিক। গায়ের রং নিয়ে মাথাব্যথা নেই। উচ্চ শিক্ষিত নিয়েও চিন্তা নেই। আমার সাথে একত্রে পথ
চলতে পারাটাই আসল কথা। মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়াটাই সমান জরুরী। আমার স্বাভাবিক কথাগুলো তার কাছে বোধোগম্য হবে, এমনটাই আশা করি। বিভিন্ন রকম সমস্যায় জর্জরিত কোনো আধুনিক
মেয়ে আমার একেবারেই দরকার নেই। এই আধুনিকতাকে মনে মনে বিসর্জন দিয়েছি অনেক আগেই। আমার প্রেয়সী হবে নিতান্তই সাধারণ, চঞ্চল, স্বাভাবিক, উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত। বোরকা পরতে হবে এমন নয়,
তবে পোষাকে মার্জিত হতে হবে। বউ এর বংশ নিয়েও আমার বিন্দুমাত্র প্রশ্ন নেই। “সে নিজে কি”, এটাই আমার শেষ কথা।
আমিও মনে মনে স্বপ্ন দেখি শেষের কবিতার মতো অমিতের কল্পনায় আঁকা দীপক নামের কুড়েঘরটি। যেখানে আমার প্রেয়সীকে নিয়ে মাঝে মাঝে সময় কাটাবো। সেই বাড়িটার চূড়োয় একটি দীপ জ্বলজ্বল
করবে। মিলনের সন্ধ্যাবেলায় তাতে জ্বলবে লাল আলো, আর বিচ্ছেদের রাতে নীল। একসাথে উপভোগ করবো পূর্ণিমার চাঁদ, জোনাকি আলো ও সেইসাথে অন্ধকার রজনী। বাড়ীর পেছনে শান বাঁধানো
পুকুর থাকবে। নির্জন এই পুকুরের শান বাঁধানো ঘাটে দুজনে গল্প করাটা নেশায় পরিনত হবে। তবে কল্পনায় আঁকা এই বাড়ীটাতে কোনো আধুনিক যন্ত্র (টেলিফোন, মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদি) থাকবে না।
কোনো ধরণের অনাকঙ্খিত ফোন কল বা বিকৃত শব্দ কোনো মুহূর্তকে যেন নষ্ট করতে না পারে, এজন্যই এসব যন্ত্র থেকে সাময়িক দূরে থাকবো। প্রাকৃতিক প্রেম যেন কোনোভাবেই বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে
সেদিকে সর্বোচ্চ নজর থাকবে………আরো কিছু কিছু একান্ত নিজের বা ব্যক্তিগত কল্পনা আছে, যা শেয়ার করতে পারলাম না…..তবে এসব কল্পনা বাস্তবেই রূপ দিব, এই কামনাই করি….
পুনশ্চ: অধীর অপেক্ষায় আছি…….আমার সেই লাবণ্যের জন্য। তবে আমার লাবণ্যই হবে কেটি মিত্র, বা আমার কেটি মিত্রই হবে লাবণ্য। শেষের কবিতার সাথে আমার এই একটি মাত্রই ব্যাপারে সাংঘর্ষিক।
(প্রথম প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩ সালে)