Patro Patri Selection

পরিচিত কারও বিয়ের জন্য একজন ভালো বেতনের চাকুরীজীবী এর চেয়ে একজন খেটে খাওয়া উদ্যোক্তা আমার কাছে পাত্র হিসাবে বেশি আকর্ষনীয়। এর ব্যাখ্যাটাও আমার কাছে জলের মতো পরিস্কার। আমি মনে করি, সমস্যা সমাধানের জন্য একজন উদ্যোক্তা যেভাবে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে; সেটা একজন চাকুরীজীবী একটি গৎবাঁধা এবং শেখানো পরিমন্ডলের বাইরে গিয়ে সমাধান করতে পারে না। এটা বলছি না যে তার ক্ষমতা/যোগ্যতা নেই। তবে একজন চাকরীজীবী ধীরে ধীরে তার কিছু যোগ্যতা/ক্ষমতা হারাতে থাকে। এর জন্য তার জব এনভায়রনমেন্ট দায়ী। একজন ব্যাংকার তার ব্যাংকিং জীবনে খুব ক্রিয়েটিভ কাজ করার ক্ষমতা রাখে না। তার বেতন আকর্ষনীয় হতে পারে। কাজ করার পরিমন্ডল অতি সীমিত। এটা শুধু আমার ধারণা নয়। আমি বেশ কিছু বন্ধু এবং ব্যাংকারদের সাথে নিজে কথা বলেই নিশ্চিত হয়েছি। খুব কম ব্যাংকারই আছেন যিনি তার এই পেশাকে ভালবাসতে পেরেছেন। একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ৫০-৭০% (আনুমানিক) দুর্নীতি, ঘুষ, জালিয়াতি, সম্পদ চুরি এবং অন্যান্য অনিয়মের মধ্যে তাকে চলতে হয়। কিছু কিছু সময়ে বাধ্য হয়ে নিজে টিকে থাকার জন্যও পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। অনেকের ফাইল আটকে দিতে হয়। কিছু ফাইল কখনই খোলা হয় না। ধূলোর স্তুপও জমতে দেখা যায়। এই হর্তাকর্তারা সরকারি গাড়িতেই চলাফেরা করেন। সবাই তাদেরকে সম্মান করেন। পা চাটেন। কর্তারা একটা গাছ লাগালেও স্থানীয় পত্রিকাতে খবর চলে আসে। আর এই কর্মকর্তার এলাকাতেই কিছু টাকার জন্য কিছু উদ্যোগ, কিছু কর্মসংস্থান থেমে থাকে। আবার অনেক সৎ কর্মকর্তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের চাপে অসৎ উপায়কে বেছে নেন কিংবা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। পাত্র/পাত্রী হিসাবে এই সকল কর্মকর্তারা অনেকের নিকটই বেশ আকর্ষনীয়। এই সকল কর্মকর্তার চরিত্রের চেয়ে ক্ষমতার দাপট অধিক থাকায় পাত্র/পাত্রীর অভিভাবকের নিকট প্রিয় হয়ে ওঠেন বেশিরভাগ সময়েই। পাত্রীর বাবা ছেলের আয় দেখেন, ভালো চাকরির নিশ্চয়তা দেখেন, গাড়ি-বাড়ি আছে কি না সেটা দেখেন। কিন্তু সেই ছেলের চরিত্র আগে নিশ্চিত হতে চান না। মেয়েকে সুখে রাখার জন্য যারা টাকা-পয়সাকে বেশি প্রাধান্য দেবেন তারা বিয়ে পরবর্তী সময়ে পস্তাবেন; এটা নিশ্চিত থাকুন। ভালবাসা নামক উপাদানটি অর্থের সাথে জড়িত নয়। আমার পরিচিত একটা সুদর্শন ছেলে (ছদ্মনাম-কিশোর) পরিচিত একটা মেয়েকে (ছদ্মনাম: নীলীমা) সম্প্রতি ধোকা দিয়েছে। কিশোর এতো বেশি আকর্ষনীয় যে সাধারণত মেয়েরা হয়তো স্বল্প সময়েই তার প্রেমে পড়ে যাবে। বেশ ভালো একটা চাকরি করে। কিন্তু কিশোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও নীলীমার সাথে প্রতারণা করে। শেষ পর্যন্ত শোনা গেলো নীলীমার খালাতো বোনের সাথেই প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে কিশোর। বিয়ে করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এক পর্যায়ে নীলীমার মা-খালাদের সাথে সম্পর্কের একটা দূরত্বও তৈরী হয়েছে। আমার ধারণা, কিশোর বিয়ের পর আরও মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করবে। সুদর্শন এবং ভালো বেতনের চাকরি দুটো উপকরণই এখন কিশোরের অযোগ্যতা। কিন্তু আপাতত যোগ্যতা হিসাবেই দেখছে নীলীমার খালাতো বোনের পরিবার। এটি একটি উদাহরণমাত্র। এরকম অসংখ্য উদাহরণ আমাদের আশেপাশে গিজগিজ করছে। মেয়েরাও বেশ প্রতারণা করছে। এই পুরো বিষয়টি অনেকের নিকট অপ্রাসঙ্গিক লাগতে পারে কিন্তু আমার কাছে বেশ প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে তাই তুলে ধরলাম। কারণ, সমাজে একজন উদ্যোক্তা/ব্যবসায়ী; ফ্রিল্যান্সার আর্টিস্ট, ফটোগ্রাফার, আইটি এক্সপার্টের মূল্য বেশ কম। সবাই নিশ্চিত একটি জীবন মানে শুধু ফিক্সড আয় চান। কিন্তু যোগ্য ব্যক্তির বর্তমান/ভবিষ্যত এনালাইসিস করেন না। একটা ছেলের বিয়ের যখন সময় হয় সাধারণত তার গাড়ি/বাড়ি থাকার কথা নয়। সে তার ক্যারিয়ার জীবন কেবল শুরু করে। ছেলেদের উপযুক্ত বিয়ের বয়স ২৭-৩০ বছর। ক্ষেত্রবিশেষে ৩২ পর্যন্ত। এর বেশি বয়সে আসলে বিয়ে করা উচিত নয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে ২৩-২৫ এর মধ্যে। ক্ষেত্রবিশেষে ২৭ পর্যন্ত ঠিক আছে। এর বেশি না হওয়াই ভালো। মেয়েদের উচিত একজন সৎ ও যোগ্য মানুষকে বিবাহের পাত্র হিসাবে নির্বাচন করা। সে কতদূর যেতে পারে সেটা পড়তে পারার যোগ্যতাও থাকতে হবে। ছেলের বাবার কি আছে সেটার চেয়ে তার কি আছে কিংবা সে কতটুকু অর্জন করতে পারে সেটা দেখা উচিত। একজন বাবার কি আছে সেটা সন্তানের কোনো যোগ্যতা নয়। বাবা শিল্পপতি কিন্তু ছেলে ইয়াবা/নেশাখোর। তাহলে লাভ কি? কোনো মেয়েরই জীবনসঙ্গী হিসাবে নেশাখোর ছেলেকে গ্রহণ করা উচিত নয়। কোনো নেশাখোরকে বিশ্বাস করা উচিৎ নয় সে মুখে যতোই মিষ্টি কথা বলুক না কেনো ! এরা মেয়ে পটানোতেও ওস্তাদ। তাই সাবধান। আবার সেই সব মেয়েদেরকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করা উচিত না যারা লোভী, অশালীন এবং নেশার সাথে জড়িত। এরা কোনোদিনই আপনার জীবনের জন্য মঙ্গল হবে না। শুধু সুন্দর চেহারা দেখে গলে যাবেন না। সুন্দরের মাঝে অনেক অসুন্দর লুকিয়ে থাকে; যা দেখা যাবে না। তাই ছেলেদেরকেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এবার সারাংশ টানি। পাত্র/পাত্রী হিসাবে যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো সততা। শুধু সততার উপর ভিত্তি করেই জীবনে সুখী হওয়া সম্ভব। অর্থ কখনই সুখ এনে দিতে পারে না। এসি/গাড়ির মধ্যে সুখ নেই যদি সত্যিকার ভালবাসা বা শ্রদ্ধাবোধটুকু না থাকে। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস কতটুকু সেটাও পরিমাপ করে দেখতে হবে। N.B. লেখায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দু:খিত। অনেক সৎ কর্মকর্তা আছেন যিনি লেখাটি পছন্দ নাও করতে পারেন। দয়া করে কেউই নিজের সাথে লেখাটিকে নেবেন না। এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত।